আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরের টানা দীর্ঘ ৩৪বছরের পদ নৌকাই ডোবালো।
রোববার (২৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে দীর্ঘ ৩৪বছরের চেয়ারম্যান পদটি হারিয়ে ফেলেন আব্দুল কাদের বিএসসি।
জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন আব্দুল কাদের। এরপর ১৯৮৮ সালে মদাতী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হারিকেন প্রতীকে প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। এরপর শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন আব্দুল কাদের। জনগণের যেকোনো সমস্যায় ঝাঁপিয়ে পড়তেন। জনগণের সুখে দুঃখে পাশে ছিলেন। জনগণও তার সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে তার পাশেই থেকেছেন। নির্বাচন এলে প্রচার প্রচারণায় তার তেমন কোনো ব্যয় ছিল না। ছিল না কোনো সভা সমাবেশ মিছিল বা উঠান বৈঠক। তিনি নিজেই মাইকিং করে নিজের প্রতীকের প্রচারণা করতেন। নির্বাচিত জন
প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের খুব কাছে থেকে সেবা দিয়েছেন তিনি। জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে প্রতিটি নির্বাচনে তাকেই ভোট দিয়ে নিরঙ্কুশ বিজয় নিশ্চিত করত। জনসেবায় কর্তৃত্ব অর্জনের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে রাস্ট্রীয়ভাবে দুইবার পুরস্কৃত করে থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন সফরে পাঠায় সরকার। এভাবে ৬টি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা ৩৪বছর মদাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আব্দুল কাদের। এর মধ্যে প্রথমবার হারিকেন ও পাঁচবার আনারস প্রতীকে নির্বাচন করেন।
পরাজয়ের গ্লানি ছিল না তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে। জীবনে প্রথমবার নৌকার মাঝি হয়ে এবারের নির্বাচনে ভরাডুবি হয় তার। অবসান ঘটে ৩৪বছরের ইতিহাস। রাজনৈতিক জীবনে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরপর প্রাক্তন এমপি মৃত মজিবর রহমানের হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। সর্বশেষ গত ২০১৩ সালে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে যোগদান করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ পান আব্দুল কাদের। গত ইউপি নির্বাচন ২০১৬ তে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে তৎকালিন মদাতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিচুর রহমানকে পরাজিত করেন। আনিচুর রহমান ৬ মাস আগে মারা গেলে এবারের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হন আব্দুল কাদের। এ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বিপ্লবের কাছে প্রায় ৩হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যান নৌকার মাঝি আব্দুল কাদের।
তবে স্থানীয়দের অনেকের দাবি, বিগত নির্বাচনের চেয়ে এই নির্বাচনে তার প্রচার প্রচারণায় আধুনিকতা ও বিলাসিতার ছাপ পড়ে। খরচ বেশি হলেও ভোটাররা এতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
কেউ কেউ বলছেন, মদাতী ইউনিয়নে নৌকা বিরোধী ভোট বেশি থাকায় ব্যক্তি পছন্দের হলেও প্রতীকের কারণে পরাজিত হয়েছেন দীর্ঘ ৩৪ বছরের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের।
আব্দুল কাদের বলেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী আমাকে ডেকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। ভেবেছিলাম সরকারি দলের প্রতীক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ আগের চেয়ে বেশি ভোট দেবেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। নৌকা প্রতীক দেওয়া হলেও আমার পাশে দাঁড়ায়নি স্থানীয় আওয়ামী লীগ। আর নৌকা প্রতীকের কারণে অধিকাংশ সাধারণ ভোটার আমাকে ভালবাসলেও নৌকায় ভোট দেননি। তাই পরাজয় ঘটেছে। মূলত এ পরাজয় আমার নয়, নৌকার।